বাংলাদেশের সুপরিচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি তার গাড়ি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, আইফোনসহ তার বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা যা নিয়েছে – সব ফেরত দেয়ার আবেদন করেছেন।
তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বিবিসিকে বলেছেন, আদালত গাড়ির মালিকানা যাচাই করতে বিআরটিএকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ১০ই অক্টোবর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন।আজ এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও পুলিশ সেটি দেয়নি। তবে হাজিরা দেয়ার দিন ধার্য থাকায় পরীমনি ঢাকার এই আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন।গত ৪ঠা অগাস্ট ঢাকার বনানীতে পরীমনির ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে আটক করেছিলো র্যাব।পরে তিন দফা রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় মোট সাতাশ দিন কারাগারে থাকার পর পহেলা সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত জানিয়েছেন যে পরীমনি নিজেও আদালতে কথা বলেছেন। “পরীমনি বলেছেন যে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বাসার চাবিসহ অনেক কিছু নেয়া হয়েছে,” বলছিলেন তিনি।নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন যে তারা আদালতে বলেছেন যে পরীমনির গাড়ির কাগজপত্র গাড়িতেই ছিলো, যেটি জব্দ করা হয়েছে। এ কারণেই গাড়ির মালিকানার কাগজপত্র আদালতে দেয়া সম্ভব হয়নি।তিনি বলেন প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস না থাকায় পরীমনি সমস্যায় পড়েছেন এবং এ জন্য মানবিক কারণে যে কোন শর্তেই হোক না কেন গাড়ি ফেরত দেয়ার জন্য আবেদন জানালে আদালত বিআরটিএকে গাড়ির মালিকানা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন।
সকালে সাড়ে দশটার দিকে হাজিরা দেয়ার জন্য আদালত চত্বরে উপস্থিত হন পরীমনি। তবে বেলা বারটার দিকে মামলার শুনানি শুরুর আগ পর্যন্ত তিনি আদালত চত্বরে গাড়িতে অবস্থান করেন।শুনানি শুরু হলে কড়া পুলিশী প্রহরায় গিয়ে আদালতের এজলাসে দাঁড়ান তিনি । শুনানির এক পর্যায়ে নিজেও কথা বলেন তিনি। শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত ভবন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় আশেপাশে ছিলো বহু মানুষের ভিড়। গাড়ীতে ওঠার পর তিনি হুড খুলে হাত নেড়ে অপেক্ষমান মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তার চোখে সানগ্লাস আর ডান হাতে ছিলো নতুন একটি বার্তা- যেখানে মেহেদী দিয়ে আঁকা মধ্যাঙ্গুলের চিহ্নের নিচে লেখা ছিলো “**** মি মোর”। পরে ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পাতাতে স্যালুট দেয়ার ভঙ্গী করে একটি ছবি পোস্ট করেছেন এবং ওই পোস্টে তিনি সিএমএম কোর্ট চেক ইন দিয়েছেন। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ওই পোস্টটি শেয়ার হয়েছে প্রায় এক হাজার বার আর ইমোজি ব্যবহার করে রিএ্যাক্ট দিয়েছেন অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষ।
তবে এ বার্তায় তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন – সে সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা পরীমনি দেননি। বিষয়টি জানার জন্য তাকে কল দেয়ার চেষ্টা করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।যদিও ফেসবুকে তিনি কিছু সংবাদ শেয়ার করেছেন – তা তার এই বার্তা নিয়ে প্রকাশ করেছে কিছু নিউজ পোর্টাল। এর আগে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনেও তার হাতে লেখা একটি বাক্য আলোচনার ঝড় তুলেছিলো। সেবার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে একটি ছাদ খোলা গাড়িতে করে ঢাকার দিকে রওনার সময় উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ার সময় ওই বার্তা চোখে পড়ে যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়েছিলো। তার হাতে ইংরেজিতে লেখা ছিল ওপরের এই বাক্যটিই – “ডোন্ট (ভালোবাসার হৃদয়সূচক তিনটি চিহ্ন) মি বিচ।” তারপর ছিলো হাতের মধ্যাঙ্গুল প্রদর্শনের একটি চিহ্ন।
পরীমনির রিমান্ড বিষয়ে হাইকোর্ট কী বলছে?
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করার মামলায় পরীমনিকে মোট তিন দফা রিমান্ড দিয়েছিলো ঢাকার একটি আদালত। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড কেন দেয়া হয়েছিলো সেটি সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে জানতে চান হাইকোর্ট। বিচারকরা যে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটি আজ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করার পর শুনানি শেষে ২৯শে সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেছে আদালত। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন ২৯শে সেপ্টেম্বর কেন তারিখ দেয়া হয়েছে – সেটি আদালতের পুরো আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।
ডান হাতের তালুতে ‘ফা..ক মি মোর’ লিখে এবং অঙ্কন করে আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে তুলোধুনো করছেন নেটিজেনরা। প্রকাশ্যে হাতের তালুতে অঙ্কিত ‘মিডল ফিঙ্গার’ প্রদর্শন করে তিনি অশ্লীল আহ্বান জানিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছে সকল মহলে মানুষ। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা নিউজের নিচে কমেন্ট বক্সে Shakil Ashraf নামের এক নেটিজেন মন্তব্য করেন- ‘কথায় আছে, একবার নাক কাটলে যায় জংগলে, লজ্জায়।আর বার বার নাক কাটলে যায় দুয়ারে দুয়ারে। লজ্জাহীন হয়ে গেছে। তার আর এসবে কিছু যায় আসে না।’ Tania Akter নামের আরেক নেটিজেন লেখন- ‘আগে জানতাম বেশি সুন্দরীরা কম বুদ্ধিমান হয়। তাই ভেবে নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবতাম। আমার ভাবনাই উলটে দিল পরিমণি। আবার আবার বোকা হয়ে গেলাম।’ Palash Mahmud নামের আরও একজন বলেন- ‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না’ বা ‘স্বভাব যায় না মরলে, আর ইল্লত যায় না ধুলে’। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পরী ট্যাক্সফাইলে বলেছেন, তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। অথচ তিনি থাকেন ১০ কোটি টাকার বাসায়। কোটি টাকার একাধিক গাড়ি, বিলাসী জীবন, ইয়টে ভ্রমণ, ক্লাবের বিল বা এসব নিয়ে কথা বলা খুব জরুরী নয়। কিন্তু একজন মানুষের উপার্জন ও জীবনযাপন দিয়ে তার গতিবিধি মাপা যায়। পরীর গতিবিধি খারাপ-ভালো সেটা তার বিষয়। কিন্তু ঔদ্ধত্যের সীমা থাকা দরকার আছে। বিবেক বুদ্ধিতে স্বাভাবিক মানুষের পরিচয় দেওয়া দরকার। মানুষের সিম্প্যাথি-ভালোবাসার মূল্যায়ণ-সম্মান করা দরকার।
আজ তিনি হাতে যা লিখেছেন তা হলো, ‘( ফা..ক ) মি মোর’। একটি শিশু বা কিশোর এটাকে ডায়ালগ হিসেবে ব্যবহার করতেই পারে। আপনি কাকে বা কাদের দিয়ে আপনাকে ( ফা..ক ) মোর করাবেন সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু পাবলিকলি বি’ব’স্ত্র হয়ে সেটা করাতে পারেন না। হ্যাঁ, সেটা আপনি পারেন যদি মানুষ না হয়ে অন্য কোনো।” এদিকে ‘ ফা..ক মি মোর’ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরীমণি নিজেই। আদালত প্রাঙ্গণে হুডখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ ভক্তদের স্যালুট জানানোর সময় মেহেদিতে লেখা সেই বার্তাটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
যথারীতি এই বার্তা নিয়েও চলছে ভক্ত-সমালোচকদের মধ্যে চুল চেরা বিশ্লেষণ। উঠেছে গুঞ্জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ক্রমেই ভাইরাল হচ্ছে। কিন্তু এবারের ‘. ফা..ক মি মোর’ স্লোগানের ব্যাখ্যা আর মেলানো যাচ্ছে না। কারণ, আগের স্লোগান ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’-এর সঙ্গে এবারেরটি বেশ বিপরীত। এবারের বার্তাটি প্রসঙ্গে আজ বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পরীমণির সঙ্গে কথা হয় দেশের প্রথম সারির একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের। ওই পোর্টালটির প্রতিবেদককে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরীমণি বলেন, “আমার কষ্ট লাগছে এখন।
অনেকেই আমার বার্তাটি ঠিক বুঝতে পারছেন না, ভুল বুঝছেন। সবাই ভাবছেন আমি লিখেছি ‘লাভ মি মোর’। আসলে তো আমি লিখেছি ‘ ফা..ক (গালি) মি মোর’।’’ কিন্তু কেন এই বার্তা? এখন তো সবই আপনার অনুকূলে। কার উদ্দেশে এটি বলেছেন? জবাবে পরীমণি বলেন, ‘যারা আমার জীবন নিয়ে খেলতে চায় বা ঘাটতে আসে, তাদের সবাইকে আমি ওয়েলকাম করছি। আসো। ওয়েলকাম। আমি প্রস্তুত তোমাদের সঙ্গে এই খেলায় অংশ নিতে। দম যতদিন আছে, আমি শেষ অবধি এই খেলায় লড়ে যাবো।’ আগের স্লোগান ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ সম্পর্কে পরী তখনই বলেছিলেন, ‘এই স্লোগান তাদের উদ্দেশে, যারা সামনে একরকম, পেছনে অন্যরকম। যারা বহুরূপী- তাদের জন্য এই বার্তা দিয়েছি।’ বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের আদালতে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তিনি উপস্থিত হোন।
এদিন আদালত চত্বরে প্রবেশের সময় গাড়িতে দাঁড়িয়ে ভক্তদের অভিবাদন জানান পরী। সেই সময় তার হাতের তালুতে মেহেদি রঙে লেখা ‘রহস্যময়’ বার্তা চোখে পড়ে। যেখানে লেখা, ‘ ফা..ক মি মোর’। এবারের আদালত কেমন লাগলো, আবার কবে হাজিরা। এসব প্রশ্নের জবাবে পরীমণি ওই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আদালত এখন আমার ভালোই লাগে। এখন তো সয়ে গেছে। আর সামনে হাজিরা… (এই দীপু মামা হাজিরা হবে?), হুম ১০ অক্টোবর।’ কথা প্রসঙ্গে পরী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি সর্দি-জ্বরে ভুগছেন। ডেঙ্গু-করোনার টেস্ট করিয়েও কোনও পজিটিভ ফল পাননি। বলেন, ‘টানা ৫টা দিন বিছানায় পড়ে ছিলাম। আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) আদালতে গিয়ে একটু ভালো লাগছে।’ নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে পরীমণি আজ নিজেই হাজতখানার গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় পুলিশ ও তার কিছু আত্মীয় হাজতখানার ভেতরে প্রবেশ করেন। হাজিরা দেওয়ার সময় পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভি তার (পরীমণির) সাদা রঙের গাড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপসহ অন্যান্য জব্দ হওয়া জিনিসপত্র চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে বনানীর বাসা থেকে পরীমণি ও তার সহযোগীকে আটক করে র্যাব। তার বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয় বলে জানানো হয়। আটকের পর তাদের নেয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। পরে র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদক আইনে পরীমণির বিরুদ্ধে মামলা করে। ১ সেপ্টেম্বর ২৭ দিনের জেল ও রিমান্ড-জীবন কাটিয়ে জামিনে মুক্ত হন পরীমণি। সম্প্রতি এই নায়িকা ফিরেছেন শুটিং-ডাবিংয়ের কাজেও। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নতুন সিনেমায়। সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, আইনি লড়াই শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার।