সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মূল সেতুতে সড়কপথ তৈরির জন্য বাকি স্ল্যাবগুলো বসানো এখন মূল কাজ। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। তবে কাজের যে গতি তাতে আগামী মাসের মধ্যেই স্ল্যাব বসানো হয়ে যাবে। পদ্মা সেতুর মূল সেতুর (নদীর অংশ) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। নিচ দিয়ে যাবে ট্রেন। যানবাহনের জন্য সড়কপথ তৈরির জন্য ২ হাজার ৯১৭টি স্ল্যাব বসানোর কথা। ইতিমধ্যে স্ল্যাব বসানো হয়েছে ২ হাজার ৭৭৩টি।

এর বাইরে মূল সেতুর দুই প্রান্তে ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে শুক্র কিংবা শনিবার শেষ স্ল্যাব বসানো হবে। তখন এই প্রান্তেও মাটি থেকে মূল সেতু পর্যন্ত জোড়া লেগে যাবে। এর আগে গত ২০ জুন ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে রেলপথ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ওই পথে এখন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হাঁটার পথ ও গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে।
৮ জুন মূল সেতুর কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। এতে কখন কোন কাজ শেষ হবে, তার সময়সীমা উল্লেখ করেছে তারা। তারা বলেছে, আগামী বছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করতে পারবে।
৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। এরপরও প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর থাকবে। তবে সে সময়টা সেতুর কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা সারানো, ঠিকাদারের পাওনা মেটানোর জন্য নির্ধারিত।
মূল সেতু ও ভায়াডাক্টের সব স্ল্যাব বসানোর পর বড় কাজ হচ্ছে যানবাহন চলাচলের পথে পিচঢালাই করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কংক্রিটের পথের ওপর প্রথমে দুই মিলিমিটারের পানি নিরোধক একটি স্তর বসানো হবে, যা ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন নামে পরিচিত। এটি অনেকটা প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের মতো। তারপর পাথর, সিমেন্ট ও বিটুমিন দিয়ে কয়েক স্তরের পিচঢালাই হবে। এর পুরুত্ব হবে প্রায় ১০০ মিলিমিটার।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার মূল সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের মাঝখানে ৬০ মিটার এলাকায় পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) পিচঢালাই করা হয়েছে। এর আগে সেতুর বাইরে সাত দফা পিচঢালাইয়ের কাজ পরীক্ষা (প্রি ট্রায়াল) করা হয়েছে। বুধবারের কাজটিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য যেমন সড়ক হবে, ঠিক তেমনই করা হয়েছে। এখন এই কাজের মান, পুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয় শর্ত মানা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে প্রথমে অনুমোদন দেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তবে চূড়ান্ত পিচঢালাইয়ের কাজ এখনই শুরু হবে না। এর পেছনে দুটি কারণ আছে। ১. বর্ষা মৌসুমে পিচঢালাইয়ের কাজ করা কঠিন। বৃষ্টিতে মালমসলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঢালাইও ভালো হয় না। ২. সব স্থানে সড়ক বিভাজক ও সেতুর পাশের দেয়াল তৈরি হয়নি। এ জন্য আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে পুরো সেতুতে পিচঢালাইয়ের কাজ শুরু হতে পারে।